বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
করোনা আবহেই পশ্চিমবাংলায় হতে চলেছে সপ্তম দফার ভোট। সোমবার। এই দফার ভোটগ্রহণ ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মানা হচ্ছে করোনা বিধিও। এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে ভোট গ্রহণ পর্বকে শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্ন রাখতে কড়া ব্যবস্থাও নিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র পুলিশও কেন্দ্রগুলিতে সক্রিয় থাকবে। ভোট শুরু সকাল ৭টায়। চলবে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। ভোর সাড়ে ৫টায় হবে মক পোলিং।
পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনে সপ্তম দফার ভোট গ্রহণ হবে ৫টি জেলার ৩৪টি আসনে। এই পাঁচটি জেলা হল দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতা। দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি, পশ্চিম বর্ধমানের ৯টি, মালদার ৬টি, মুর্শিদাবাদের ৯টি এবং কলকাতার ৪টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৮ জন। পুরুষ প্রার্থী ২৩১ জন এবং মহিলা ৩৭ জন। বর্তমান করোনা আবহে এই ভোট গ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের একটি ঘোষণায় খুশির হাওয়া ভোটদাতাদের মধ্যে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রবীণ নাগরিক এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম (প্রতিবন্ধী) ভোটদাতাদের বাড়ি থেকে বুথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাপ ক্যাবের ব্যবস্থা করা হবে। এ কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বসু।
এদিন যাঁদের ভাগ্য পরীক্ষা হবে, সেই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের ৪ জন মন্ত্রী। তাঁরা হলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বালিগঞ্জ, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভবানীপুর কেন্দ্রে, ফিরহাদ হাকিম লড়াই করছেন কলকাতা বন্দর কেন্দ্র থেকে এবং মলয় ঘটকের কেন্দ্রের নাম আসানসোল উত্তর। তবে এই দফায় মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে ভোট হচ্ছে না। সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হক এবং জঙ্গিপুরের আরএসপি প্রার্থী প্রদীপ নন্দী করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গিয়েছেন। কেন্দ্রদুটিতে ভোট হবে ১৬ মে। ভোট পর্ব ঘোষণার আগে সপ্তম দফায় ৩৬ আসনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। দুই প্রার্থীর মৃত্যুর জন্য এই দফায় ৩৪ আসনে ভোট হবে।
সোমবার সপ্তম দফায় মোট ভোটদাতা রয়েছেন ৮১ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৪২ জন। বুথের সংখ্যা ১১ হাজার ৩৭৬টি। এদিন যে ৩৪টি আসনে ভোট নেওয়া হবে, সেগুলি হল কুমারগঞ্জ, বালুরঘাট, তপন, গঙ্গারামপুর, হরিরামপুর, হবিবপুর, গাজল, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতিপুর, রতুয়া, ফরাক্কা, সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, লালগোলা, ভগবানগোলা, রানিনগর, মুর্শিদাবাদ, নবগ্রাম, কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, রাসবিহারী, বালিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, আসানসোল দক্ষিণ, আসানসোল উত্তর, কুলটি, বারাবনিতে। এদিন বালুরঘাট আসনে ভাগ্য পরীক্ষা হচ্ছে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ির। তিনি বিজেপির টিকিটে লড়ছেন। এই দফার ভোটে নজর কাড়ছে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র। টলিউড তারকা সায়নী ঘোষ এখানে তৃণমূলের প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন বিজেপি নেত্রী তথা ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল। পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার এবার সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী বাম নেত্রী ঐশী ঘোষ।
করোনা বিধি মেনে সব কটি বুথই ইতিমধ্যে স্যানিটাইজ করা হয়েছে। গোটা ভারতই করোনা সংক্রমণের ঢেউয়ে ব্যতিব্যস্ত। মহারাষ্ট্র এবং দিল্লির অবস্থা তো খুবই খারাপ। তবে ওই দুটি রাজ্যের তুলনায় খারাপ না হলেও বর্তমানে পশ্চিমবাংলায় করোনা সংক্রমণের গ্রাফ রীতিমতো ঊর্ধ্বমুখী। তাই করোনা সংক্রমণের প্রভাব যাতে ভোটের ওপর না পড়ে, সে বিষয়ে তৎপর কমিশনও। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভোটদাতাদের লাইনে দাঁড়াতে হবে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে এবং সকলকে মাস্ক পরে বুথে যেতে হবে। বুথে ঢুকলেই দেওয়া হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং গ্লাভস। শুধু তাই নয়, বুথে ঢোকার আগে থার্মাল গান দিয়ে ভোটদাতার তাপমাত্রা মাপা হবে। যদি কোনও ভোটদাতা করোনা বিধি না মানেন, তাঁকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হবে। ভোট দিতেও দেওয়া হবে না।
তবে এদিনের ভোটে হিংসার ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারেও নির্বাচন কমিশন কড়া দৃষ্টি রেখেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবেই এদিন প্রতিটি বুথের ১০০ এবং ২০০ মিটারের মধ্যে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। ওই সীমার মধ্যে ভোটদাতা, ভোটকর্মী, পুলিশ প্রশাসন ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবেন না। কড়া নজরদারি চালাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ। এদিন ৩৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ৭৯৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকছে। এই বাহিনীর মধ্যে ৬৫৩ কোম্পানিই থাকবে বুথের নিরাপত্তায়। আসানসোল–দুর্গাপুরে ১৫৪ কোম্পানি, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় ১০২, মুর্শিদাবাদে ১০২, কলকাতায় ৬৩, মালদায় ১২২, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০৮ এবং রায়গঞ্জ পুলিশ জেলায় ২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
এ ছাড়া এদিনই প্রয়াত হলেন তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহা। করোনা সংক্রমিত হয়ে তিনি কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রবিবার ভোররাতে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি খড়দা বিধানসভা আসনের প্রার্থী ছিলেন। তাঁর ভোট হয়ে গিয়েছে ষষ্ঠ দফায় ২২ এপ্রিল। তাই ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল হচ্ছে না। তবে যদি ভোটের ফলে তিনি জিতে যান, তা হলে ওই কেন্দ্রে ফের ভোট গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন : দিল্লিতে প্রতি ঘণ্টায় ১২ করোনা রোগীর মৃত্যু